সুস্থ থাকতে চাইলে অবশ্যই বদলাতে হবে রোজকার যে ৪টি অভ্যাস

Tweet

girl drinkingলাইফস্টাইল ডেস্ক:
আমাদের প্রতিদিনকার রুটিনে এমন কিছু কাজ আছে যা আমরা অনেকদিন থেকে করে আসছি। এখন এই কাজগুলো আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমরা অভ্যাসবশত আপনা আপনিই করে থাকি। এই সব কাজের মধ্যে দাঁত মাজা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা থেকে শুরু করে বোতলজাত পানি পানের কাজ পর্যন্ত সবই আছে। এই কাজগুলো শুধুমাত্র আমরাই করি না, এমনকি আমাদের চেয়ে বয়েসে ছোট সকলকে করতে উপদেশ দেই।
কিন্তু প্রতিদিনের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অভ্যাসবশত আমরা যে কাজগুলো করে থাকি এবং আমাদের ছোটোদের করার দীক্ষা দিই- তার সবই কি ভালো? বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এইসব সুরক্ষার কাজগুলো কি সবই ঠিক? না। এইসব অভ্যাসগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজেও রয়েছে ভুল। যে ভুলগুলো উল্টো আমাদের স্বাস্থ্যহানি ঘতাতে পারে। আসুন দেখে নেয়া যাক সেইসব অভ্যাস যা বদলে ফেলা জরুরি।

খাবার পরপরই দাঁত মাজা
ছোটবেলা থেকে আমাদের শেখানো হয় খাওয়ার পর দাঁত মাজার গুরুত্ব কতোটুকু। এবং আমরাও এখন আমাদের চেয়ে বয়সে ছোট বাচ্চাদেরকে খাওয়ার পরে দাঁত মাজার জন্য বলে থাকি। এখনো মায়েরা রাতের খাবার খাওয়ার পরপরই বাচ্চাদের পেছনে লেগে থাকেন দাঁত ব্রাশ করার জন্য। কিন্তু এই অভ্যাসটি কতোটুকু ঠিক? খাবার পরপরই দাঁত মাজায়
দাঁতের কি আসলেই ভালো হচ্ছে নাকি খারাপ হচ্ছে?
ডেন্টাল এক্সপার্টদের মতে, খাওয়ার পরপরই দাঁত মাজতে যাওয়া একটি ভুল কাজ যা দাঁতের অপূরণীয় ক্ষতি করে থাকে। দিনে দুই বার দাঁত মাজা প্রয়োজন কিন্তু খাওয়ার পরপরই নয়। ডেন্টাল এক্সপার্টরা বলেন, খাওয়ার সময় খাদ্যবস্তু ছোটছোট টুকরো করতে মুখগহ্বরে এক ধরনের তরল নির্গত হয় যার অ্যাসিডিটি দাঁতের উপরের এনামেলকে দুর্বল করে ফেলটে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই তরলটি আমাদের মুখ থেকে বের হয় ততোক্ষণের মধ্যে যদি দাঁত মাজা হয় তবে দাঁতের উপরের এনামেল ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং আমরা স্থায়ীভাবে সেন্সিটিভিটির কবলে পড়ি। সুতরাং দাঁতের সুরক্ষায় খাবার পরপরই দাঁত মাজার অভ্যাস দ্রুত বদলে ফেলতে হবে। এবং খাবার খাওয়ার অন্তত এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর দাঁত মাজতে পারেন।

হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার
বাসে, ট্রেনে ওঠার সময় দরজার হ্যান্ডেল কিংবা কোথাও গেলে সেখানের কোন জিনিষ ধরার ক্ষেত্রে অনেকেই জীবাণুর হাত থেকে বাচার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহার উপযোগী হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে থাকি। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যাবহারের উপকারিতা দেখে আমরা বর্তমানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার অনেক নিরাপদ মনে করে থাকি। এবং নিশ্চিন্তে নিজে ও বাচ্চাদেরকে তা ব্যবহার করতে দেই। কিন্তু জানেন কি, এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার আমাদের সুরক্ষার থেকে ক্ষতি বেশি করে।
ইউএসের ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া ডেভিস’এর গবেষকরা সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখতে পান হ্যান্ড স্যানিটাইজারে বিদ্যমান কেমিক্যাল ‘ট্রিক্লসান’ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই কেমিক্যালটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার আমাদের হাতে দ্রুত শোষণের জন্য ব্যবহার করা হয়। ট্রিক্লসান আমাদের হাতে শোষিত হয়ে রক্তে মিশে যায় এবং দেহের অভ্যন্তরীণ কোষ যোগাযোগে বাঁধা প্রদান করে। দীর্ঘ সময় ব্যবহারে এটি বন্ধ্যাত্ব, দ্রুত বয়ঃসন্ধি এবং হৃৎপিন্ডের দুর্বলতার মত জটিলতার সৃষ্টি করে। তাই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যাবহারের এই মারাত্মক অভ্যাসটি দ্রুত পরিহার করুন। এর বদলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আপনি পানি ও সাবান ব্যবহার করে হাত ধুয়ে ফেলুন।

ঘন ঘন প্রসাধনী বদলানো
অনেকেই নিজের ব্যাবহারের প্রসাধনী ঘন ঘন পাল্টে ফেলেন। নিত্য নতুন প্রসাধনী ও ভালো কোন ব্র্যান্ডের নতুন প্রসাধনী বাজারে আসলেই যে সেটি ব্যাবহারের উপযোগী হবে এমনটি ভাবা বোকামি। চর্মরোগবিশেষজ্ঞ ডাঃ মনোহর বলেন, মানুষের ত্বকের পিএইচের মাত্রা ৫.৫। বাজারের প্রত্যেকটি প্রসাধনীর পিএইচ (পটেনশিয়াল হাইড্রোজেন) এর মাত্রা আলাদা হয়। একই ব্র্যান্ডের বিভিন্ন প্রসাধনীর পিএইচের মাত্রাও বিভিন্ন হয়। যাদের ত্বক সংবেদনশীল তারা কিছু সপ্তাহ পর পর প্রসাধনী বদলে ফেললে ত্বক তা সহ্য করতে পারে না। এতে করে নানান ধরনের ইনফেকশনের সৃষ্টি হয়। তাই আপনার ত্বকের জন্য উপযোগী ভালো ব্র্যান্ডের সঠিক মাত্রার প্রসাধনী খুঁজে বের করুন। এতে ত্বক ভালো থাকবে এবং ইনফেকশনের ঝামেলা
থকবে না। যদি প্রসাধনী বদলাতে চান তবে প্রসাধনীর গায়ে লেখা পিএইচের মাত্রা দেখে কিনুন।

বোতলজাত পানি পান করা
ভেবে দেখেছেন কি, আসলে বোতলজাত পানি কতোটুকু নিরাপত্তা দিতে পারে আপনাকে? এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে কিনা তা না জেনেই আমরা এটি ব্যবহার করে থাকি আমাদের তৃষ্ণা মেটাতে। প্রাথমিক ভাবে তৃষ্ণা মিটলেও ভবিষ্যতের জন্য এই বোতলজাত পানি বিপদজনক। বোতলজাত পানি আসলে একটি প্রক্রিয়াজাত পানি যা থেকে জীবাণুর পাশাপাশি প্রাকৃতিক খনিজও দূর করা হয়। এইসব প্রাকৃতিক খনিজ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারি। দীর্ঘ সময় ধরে বোতলজাত পানি পান করলে আপনার শরীরের জন্য অপরিহার্য খনিজ পদার্থ যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সিলিকা এবং সালফেট ইত্যাদির অভাব দেখা দেয় শরীরে। সুতরাং আজই বোতলজাত পানি পানের অভ্যাস ত্যাগ করুন। বাসায় নিজস্ব ভাবে পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবহার করে পানি পান করুন এবং বাসার বাইরে গেলে সাথে এই বিশুদ্ধ পানি বোতলে বহন করুন।

Leave a Reply